osmangoni.blog

                        Follow And Subscribe

ডিজিটাল যুগে নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের সচেতনতা:সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্রাইভেসির চ্যালেঞ্জ

ডিজিটাল যুগে আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ কাটছে অনলাইনে। আমরা খবর পড়ছি, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছি, কেনাকাটা করছি, এমনকি ব্যাংকিংও করছি। কিন্তু এই আরামের সঙ্গে রয়েছে এক অদৃশ্য ঝুঁকি।

আমারা আজকের ভিডিওতে জানবো
-অনলাইনে আমরা কতটা নিরাপদ?
-Free Apps এর আড়ালে কিভাবে social gaint রা পৃথিবীর শীর্ষ ধনী হয়ে উঠেছে।
-কিভাবে আমারা নিরাপদ থাকতে পারি?

সাইবার জগতে আমাদের প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি লাইক, প্রতিটি শেয়ার আমাদের সম্পর্কে তথ্য তৈরি করছে। এই তথ্যগুলো কেবল আপনার নয়, এটি অন্যের জন্যও মূল্যবান। ডিজিটাল যুগে তথ্যই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। বিখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী The Economist ২০১৭ সালে বলেছিল, “Data is the new oil”—তথ্য এখন পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এই তথ্যকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে বিশাল প্রযুক্তি শিল্প, যা প্রতি বছর শত শত বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে।

আমরা ভাবি সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রি। তবে বাস্তবে আমরা এর মূল্য দিচ্ছি আমাদের তথ্য এবং সময় দিয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের আয়ের প্রধান উৎস হলো বিজ্ঞাপন। ২০২৫ সালে গ্লোবাল ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজার প্রায় $700 বিলিয়ন ছাড়াবে, যার একটি বড় অংশ Facebook, Google, TikTok-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর দখলে থাকবে।

তবে, একই সময়ে এই তথ্য অপরাধীদের হাতেও পৌঁছাচ্ছে, যা সাইবার অপরাধের (Cybercrime) বিস্তৃত সুযোগ তৈরি করেছে। World Economic Forum এবং Cybersecurity Ventures-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে সাইবার অপরাধে সারা বিশ্বের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে।

এই মূহুর্তে একজন মানুষ গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা অনলাইনে ব্যয় করে।সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আমরা সকাল ঘুম থেকে উঠেই Facebook, YouTube,TikTok, Gmail, এর নোটিফিকেশন চেক করি। দিনশেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও এসব অ্যাপই আমাদের সঙ্গী। এই সময়টা আমরা পরিবার, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ, ব্যবসায়িক কাজ বা বিনোদনের জন্য ব্যবহার করি। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি, এসব ফ্রি অ্যাপের CEO-রা কীভাবে বিলিয়নিয়ার হচ্ছেন?আপনি যখন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলিতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন, তখন তাদের শর্তাবলীর (Terms & Conditions) মাধ্যমে নিজেই তাদেরকে আপনার ডেটা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে দেন। আপনি জানেন বা না জানেন, এই অ্যাপগুলো আপনার:লোকেশন,সার্চ হিস্ট্রি,ব্রাউজিং হিস্ট্রি,কুকিজ,IP অ্যাড্রেস,এমনকি আপনার কথোপকথন এবং মুভমেন্ট ট্র্যাক করে।কিছু অ্যাপ তো ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন অ্যাক্সেসও নিয়ে নেয়।আবার এসব কিছুই সে তার এডভান্স আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজের দ্বারা এডস এর জন্য ব্যবহার করে।এই সোশাল মিডিয়া কোম্পানি গুলো বিজনেস মডেলই হলো personalised ads করে ইনকাম করা

আচ্ছা আপনার কাছে কি মনে হয় Facebook, Google, tiktok. এর কাছে আপনার আমার কি ডেটা আছে আপনি হয়তো আমার মতো বলবেন নাম, ফোন নাম্বার, লোকেশন এসব আছে, না তাদের কাছে আপনি এই যাবত যার সাথে যোগাযোগ করেছেন, কোন website এ উকি মেরেছেন, কখন কোন সময় আপনি Active থাকেন,আপনার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস কি, কখন কোন প্রোডাক্ট সার্চ করতেছেন, সব তথ্যই তার কাছে ভান্ডারে রেখে দিয়েছে। এবার কোন কোন কোম্পানি আছে আবার এই ডাটা গুলো বিক্রিও করেও ইনকাম করে। আমার আপনার তথ্য Dark Web-এ প্রতিটি চুরি হওয়া ডেটা বিক্রি হয় মাত্র $১-$৫ ডলারে।

বিশ্ব শীর্ষ ধনীর তালিকা খেয়াল করলে Mark Zuckerberg, Zhang Yiming, Elon Musk,Larry Page,সোশ্যাল Social Gaint রাই প্রথম সারিতে। তাদের বিজনেস এর products কিন্তু কোনো পন্য নয় আমরাই হলাম তাদের প্রোডাক্ট।

Andrew Lewis ২০১০ সালে MetaFilter নামে একটি অনলাইন ফোরামে পোস্ট করেছিলেন যে,
If you’re not paying for the product, you are the product”
এই উক্তিটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ডেটা-নির্ভর ব্যবসার বাস্তবতাকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করে।

-২০১৯ সালে ফেসবুকের একটি বড় ডাটা লিক ঘটে। ৫৩ কোটি ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টারনেটে ফাঁস হয়ে যায়। এই কেলেঙ্কারির কারণে ফেসবুককে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (FTC) কাছে রেকর্ড $৫ বিলিয়ন জরিমানা দিতে হয়।

D.C. অ্যাটর্নি জেনারেল কার্ল রেসিন ২০২২ সালে মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, যা ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা স্ক্যান্ডালের সাথে সম্পর্কিত। অভিযোগ ছিল যে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

২০১৩-২০১৪ সালে ইয়াহু ৩০০ কোটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়।২০১৬ সালে উবার হ্যাক হয়ে ৫৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর ডেটা ফাঁস।২০১৯ সালে ক্যাপিটাল ওয়ান হ্যাক হয়ে ১০৬ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য হ্যাক।২০১৩ সালে অ্যাডোবি হ্যাক হয়ে১৫২ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য চুরি।

২০১৪ সালে Apple iCloud হ্যাক হয়ে সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও চুরি করে অনলাইনে ফাঁস করা হয়, যা “দ্য ফ্যাপেনিং” নামে পরিচিত।

শুধু বড় কোম্পানি নয়, আমরা সবাই ঝুঁকির মধ্যে
আরো অনেক বড় বড় কোম্পানি গ্রাহকের ডেটা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।তাহলে বলতেই পারি এই অনলাইনে আপনি আমি কখনোই নিরাপদ নয়।

ধরুন মজিদ ও মফিজ দুই বন্ধু। মজিদ এর Facebook, gmail, tik tok, WhatsApp সব কিছু রয়েছে, আর মফিজ এর কিছু নেই এখানে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ হলো মফিজ। তো বলতে পারেন তাহলে কি আমরা এসব ব্যবহার করবো না অবশ্যই করবো।

নিরাপত্তার জন্য আমরা আমাদের ডিভাইসের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ইউজ ব্যবহার করবো।Two-Factor Authentication) চালু করুন,সন্দেহজনক লিঙ্ক ফিশিং লিঙ্ক থেকে সাবধান থাকুন,ডিভাইস এবং সফটওয়্যার আপডেট রাখুন,পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার এড়িয়ে চালুন,ডেটা প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট রাখুন,ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে সতর্ক থাকুন,বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন,ফেসবুক, গুগলের মতো প্ল্যাটফর্মে “Ad Preferences” থেকে আপনার ব্যক্তিগত ডেটা শেয়ারিং সীমিত করুন।যে ওয়েবসাইটে HTTPS আছে, সেগুলোই ব্যবহার করুন।নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন ।

সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের শক্তি হলো আমাদের তথ্য এবং সময়। তাদের থামানো সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা সচেতন হলে এবং আমাদের ডেটার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখলে অনেক নিরাপদ থাকতে পারি। মনে রাখবেন, আপনি পণ্য নন, আপনি ব্যক্তি।

“তথ্যই শক্তি, তাই আপনার তথ্যের মালিকানা নিজের হাতে রাখুন।” ধন্যবাদ সবাইকে, নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন।

Scroll to Top